নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন দীপেনকে নিয়ে ক্ষমতাসিন দলের এক সংসদ সদস্যের দেয়া বক্তব্য বিএনপি’র দলীয় মহলে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। ওই নেতা নিজ উপজেলায় বিএনপির কার্যক্রম পরিচালনা না করার শর্তে ওই সাংসদের সুপারিশে মোটা অংকের টাকার ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।
এমনকি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করেই নিজের আত্মীয়ের মাধ্যমে পূর্ণ কাজের বিল গিয়াস উদ্দীন দীপেন তুলে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীদের দাবি সরকার দলীয় এমপির সাথে আতাত করে উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন দীপেন ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নেয়া রাজনৈতিক নীতি ও নৈতিকতা বহির্ভুত কাজ।
আর তাই বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে এরি মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এমনকি বিভাগের টিম লিডার ও কেন্দ্রেীয় বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর কাছে নালিশ করেছেন তারা। যদিও ক্ষমতাসিন দলের এমপির দেয়া এমন বক্তব্যের ঘোর বিরোধীতা করেছেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন দীপেন।
তার দাবি তিনি ¯’ানীয় এমপি পংকজ নাথ এর শুপারিসে কোন ঠিকাদারী কাজ করেননি। তাছাড়া সামাজিকভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক থাকলেও সেটা রাজনীতির ক্ষেত্রে নয় বলে দাবি দীপেনের।
দলীয় নেতৃবৃন্দের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ‘সম্প্রতি স্থানীয় এমপি পংকজ নাথ স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “বিএনপির সম্পাদক দীপেন আমার কাছ থেকে কোটি টাকার কাজ নিয়েছে, আবার এলাকায় আন্দোলন করে কেন? সংসদ সদস্যের বক্তব্যের ভাষাটা ছিল কাজ নিয়ে দীপেন নিশ্চুপ রাজনীতি করবে। কিন্তু কোটি টাকার কাজ নিলো আবার দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে আন্দোলনও করছে। মাইকে বিষয়টি প্রচারের পর সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে সমালোচনা শুরু হয়।
বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর উপজেলা বিএনপির নেতারা বিভাগীয় টিমের প্রধান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর কাছে মৌখিকভাবে নালিশ করেন। আব্দুল আউয়াল মিন্টু বিষয়টি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে লিখিত আকারে দিতে বলেন।
বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমপি পংকজ নাথ ২৮ আগস্টের ওই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দীন ফরহাদ যেন কোনভাবেই এলাকায় উঠতে না পারে। যারা মেজবাহ ফরহাদকে প্রতিহত করতে পারবে তাদেরকে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা দেন তিনি।
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দীন দীপেন বলেন, ‘এমপি পংকজ নাথ বয়সে আমার জুনিয়র। তাঁর কাছ থেকে আমি কম টাকার কাজ চাইবো কেন? চাইলে ৫ কোটি টাকার কাজ চাইবো। পংকজ রাজনীতির সুবিধা নেয়ার জন্যই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। তিনি বলেন, মেহেন্দিগঞ্জে আমাদের আলাদা প্রভাব রয়েছে। সামনে বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হবে। তাই আমাদের দলের ভিতরে কেউ ব্যক্তি স্বার্থে আমার বিরুদ্ধে এমন ভূল তথ্য দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মো. শহীদুল্লাহ বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়াও শুরু করেছি। সত্যতা পাওয়া গেলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে, লিখিত অভিযোগসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চর এককরিয়া ইউনিয়নে খাল খননের প্রায় এক কোটি টাকার একটি কাজ পায় সুজন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যার স্বত্ত্বাধিকারী ইউনুস তালুকদার নামের এক ব্যক্তি।
কাজটি পাইয়ে দেয়ার জন্য সাবেক মৎস্য অফিসার ভিক্টোর বাইনের কাছে সুপারিশ করেণ স্থানীয় এমপি পংকজ নাথ। কোন ধরণের প্রমাণ না রাখতে অন্যের লাইন্সেসে কাজটি করছেন বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দীন দীপেন। সূত্রে জানা গেছে, ঐ উপজেলার আব্দুল জলিল জম্মাদারের ছেলে খাল পুঃন খনন প্রকল্প (খ.ঈ.ঝ) এর কমিটির প্রধান শামিম আহাম্মেদ বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দীন দীপেনের ভাগিনা। শামিম আহাম্মেদের স্বাক্ষরে গিয়াস উদ্দীন দীপেনের কাজের বিল উত্তোলন করা হয়েছে। অফিসিয়াল পত্রে তাঁর প্রমাণও রয়েছে।
বিষয়টি তদন্ত হলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট অফিসের দায়িত্বশীল সূত্র। তবে এ বিষয়ে শামিম আহাম্মেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, অফিস থেকে মাত্র বাসায় এসেছি, এখন কিছু বলতে পারবেনা, পরে ফোন দিবেন বলে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেয়। একই কমিটির সদস্য মো. আবদুল্লাহ বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দীন দীপেনের কাজটি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আমার জানা মতে কাজের বিল এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ উত্তোলন হয়নি, আংশিক হয়েছে। তবে সংসদ সদস্যর সুপারিশে যে কাজটি পাওয়া তা আমি বলতে পারি না। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে উপজেলার সাবেক মৎস্য অফিসার ভিক্টোর বাইনের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্থলে কর্মরত মৎস্য অফিসার মো. কামাল হোসেন বলেন, ৩নং চর এরকরিয়া ইউনিয়নের দাদপুরে খাল পুনঃখন প্রকল্পের একটি কাজ আমার সাবেক কর্মকর্তার সময় দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে কাজটি শেষ হয়েছে। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছি।
কিন্তু কাজটির জন্য কেউ সুপারিশ করেছিল কিনা সেটা আমার জানা নেই। বরিশাল জেলা মৎস অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত কাজ যতটুকু বুঝে পেয়েছি ততটুকুর বিল ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে। বাকি বিল এখনো আটকা আছে। তবে ঠিকাদারী কাজের নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
—