৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সন্ধ্যা ৭:১৯
শিরোনামঃ

দেশে প্রথম ৬ লেনের দৃষ্টিনন্দন মধুমতি সেতুর উদ্বোধন আজ

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ সোমবার, অক্টোবর ১০, ২০২২,
  • 196 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

পদ্মা সেতুর পর এবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণের দুয়ার খ্যাত কালনা সেতু। এর মাধ্যমে নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু এটি। কালনা সেতুর নামকরণ করা হয়েছে ‘মধুমতি সেতু’। সেতুটি উদ্বোধন হলে দেশের ১০ জেলা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর আরেকটি স্বপ্নপূরণ হবে।

সোমবার (১০ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মধুমতি সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেতু কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা লোহাগড়া উপজেলার কালনা। অপরপ্রান্তে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা। মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন মধুমতি সেতু।

কালনাঘাটে স্থাপিত নামফলক থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজ শুরু করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় ও দেশীয় অর্থে সেতুটি নির্মাণ করছে জাপানের টেককেন করপোরেশন ওয়াইবিসি জেভি কোম্পানি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড। মধুমতি সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে শেষ হবে কালনা ফেরি ঘাটের দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ।

দৃষ্টিনন্দন নেলসন লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) মধুমতি সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান জানান, মধুমতি সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার বহুল আকাঙ্ক্ষিত একটি সেতু। আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলেও নড়াইল ও যশোর থেকে শুরু করে ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষ এর (পদ্মা সেতু) পুরোপুরি সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। মধুমতি সেতু চালু হলে পদ্মা সেতুর শতভাগ সুফল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে।

তিনি বলেন, আমাদের এই মধুমতি সেতু সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার, যেটি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে চওড়া সেতু। এই সেতুতে মোট ১৩টি স্প্যান রয়েছে। সেতুর মাঝখানে ধনুকের মত বাঁকা ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান সুদৃশ্য ডিজাইন করে বসানো হয়েছে। নেলসন লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে।

উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সংযোগ সড়কের বাঁকগুলো যানবাহন চলাচলের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে দুর্ঘটনা রোধে আট লেনের সমান প্রস্থ রাখা হয়েছে। দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য চার লেন ও ধীর গতির যানবাহনের জন্য দুই লেন মোট ছয় লেন বিশিষ্ট সেতুর নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকা ৮৫ লাখ টাকা।

আশরাফুজ্জামান বলেন, এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। এই সেতুটি শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ান হাইওয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে শুরু হয়ে জাপানে গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেতু এই সেতুর মাধ্যমে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ’ স্থাপিত হবে। কলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদী বন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী সেতুটি উদ্বোধন করার পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেতুটি উদ্বোধনের পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সেতুর টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে বড় ট্রেইলার ৫৬৫ টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০ টাকা, দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫ টাকা, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কনভারশনকৃত জিপ ও রে-কার ৯০ টাকা, প্রাইভেটকার ৫৫ টাকা, অটো টেম্পু, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান ও সাইকেল ৫ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী জানান, ফেরির জন্য আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হবে না। তাদের এলাকার কৃষকরা উৎপাদিত কৃষি পণ্য দ্রুত স্থানান্তর করে ন্যায্যমূল্য পাবেন যেমনি, অন্যদিকে এই সেতুর কারণে এলাকায় কলকারখানা গড়ে উঠে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে মধুমতি সেতু উদ্বোধন হলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে।

লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মশিউর রহমান জানান, মধুমতি সেতু মূলত গোপালগঞ্জ জেলায় হলেও এই সেতুর সুফল ভোগ করবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষ। তাই এই অঞ্চলের প্রবেশদার খ্যাত মধুমতি সেতু দ্বারা আমরা নড়াইলবাসী বেশি উপকৃত হবো। প্রধানমন্ত্রী যে কথা দিয়েছিলেন তা তিনি রেখেছেন। আমাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত মধুমতি সেতু উপহার দেওয়ায় নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ তথা নড়াইলের জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজার মাধ্যমে ইপিজেডের ঘোষণা দিয়েছেন। মধুমতি সেতু উদ্বোধনের পর খুব দ্রুত ইপিজেডের কাজ শুরু হবে বলে আশা করি। মধুমতি সেতু প্রধানমন্ত্রীর জেলায় অবস্থিত হওয়ার পরও সব আনুষ্ঠানিকতা নড়াইল অংশে হওয়ায় আমরা আনন্দিত।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo