৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ৮:৫৯
শিরোনামঃ

বিএনপির সমাবেশ: বরিশালের সব আবাসিক হোটেলের সিট বুকিং

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ রবিবার, অক্টোবর ৩০, ২০২২,
  • 215 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

আগামী ৫ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে নগরীর অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বরের সিট অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। শনিবার সকালে নগরীর একাধিক হোটেলের মালিক ও ম্যানেজারের সাথে কথা বলে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

সূত্রমতে, মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধে বরিশাল বাস মালিক গ্রুপ ও বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতি ৪ ও ৫ নভেম্বর কর্মবিরতীর ঘোষণা করেছে। ফলে গণসমাবেশের দিন শনিবার ও তার আগেরদিন শুক্রবার বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক ও দুরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

এ কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে আগেই শহরে অবস্থান নিবেন। ফলে নগরীর আবাসিক হোটেলগুলোতে অগ্রিম সিট বুকিং দিয়েছেন। একই সময়ে নৌযান চলাচলও বন্ধ রাখার আভাস দিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে ছোট-বড় শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। প্রত্যেক হোটেলে গড়ে ৭০টি করে সিট রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই হোটেলগুলোতে ঢাকাসহ বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে সিট বুকিংয়ের জন্য কল আসছে।

গত দুইদিন আগে অধিকাংশ হোটেলের সিট অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। হোটেল মালিকরা নিয়ম অনুযায়ী বোর্ডারদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে রেখেছেন। পাশাপাশি হোটেলে প্রবেশের সময় সিসি ক্যামেরা বা ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখবেন।

তবে অগ্রিম বুকিং দেয়া ব্যক্তিরা বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে আসবেন কিনা তা হোটেল সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

নগরীর হোটেল আলভির ব্যবস্থাপক সোহরাফ হোসেন জানান, তার হোটেলে ওই দুদিনের জন্য সব সিট অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। অগ্রিম বুকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব নিয়মকানুন মানা হয়েছে। হোটেল সামস্-এর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মানিক জানান, ঢাকাসহ বরিশাল বিভাগের মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ, লালমোহন, পটুয়াখালী থেকে ওই দুদিনের সিট বুকিংয়ে সবচেয়ে বেশি কল আসছে। এখন বিরক্ত হয়ে কোনো ফোন কল রিসিভ করছি না।

উল্লেখ্য, আগামী ৫ নভেম্বর বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশের ১০ দিন আগে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ। আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে তাদের দাবি অনুযায়ী মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যান বন্ধ না হলে ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশাল বিভাগ থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।

এছাড়া বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরাও একই দাবিতে ওই দুইদিন কর্মবিরতীর ঘোষণা দিয়েছেন। বাস-লঞ্চ বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে দুই মালিক সমিতি নানা যুক্তি দিলেও বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সিনিয়র সদস্য ও জেলা উত্তর ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক এসএম মনির-উজ জামান মনির বলেন, বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতেই এগুলো করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নেপথ্য ইশারাতেই মালিক সমিতির নেতারা এগুলো করছেন।

তিনি আরও বলেন, কথিত ধর্মঘটের নাটক সাজিয়ে বরিশালের গণসমাবেশ ঠেকানো যাবেনা। জনগণ সব বাঁধা উপেক্ষা করে যথাসময়ে নগরীর বেলর্স পার্ক (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) ময়দানের সমাবেশস্থলে পৌঁছাবে। প্রয়োজনে নদী সাঁতরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সমাবেশে যোগদান করবেন। আর বরিশালের গণসমাবেশ থেকেই সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করা হবে বলেও তিনি হুশিয়ারী উচ্চারন করেন।

তবে বিএনপির এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সমাবেশ সফল হবেনা বুঝতে পেরেই বিএনপি নেতারা মনগড়া বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

সূত্রমকে, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। নগরীর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে বিএনপির নেতৃবৃন্দরা। সমাবেশ সফল করতে প্রতিদিনই চলছে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রস্তুতি সভা। সমাবেশ ঘিরে যখন পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে ঠিক সেই মুহুর্তে আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর বাস ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

৫ নভেম্বর বিএনপির সমাবেশের একদিন আগে বাস বন্ধের বিষয়ে বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, সমাবেশের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। কবে কোথায় এই সমাবেশ হবে তাও জানিনা।

বাসের পাশাপাশি লঞ্চ চলাচল বন্ধের আভাস দিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে দুরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেন হবে? এখন যা পরিস্থিতি তাতে যেকোনো সময় লঞ্চ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে লঞ্চ পরিচালনা ব্যয়ের সমন্বয় করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। সেই সাথে চলছে যাত্রী সংকট। পরিস্থিতি এমন যেকোনো সময় আমাদের লঞ্চ বন্ধ করে দিতে হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস ও লঞ্চের পাশাপাশি বরিশাল নগরীর সাথে সংযোগ রক্ষায় কীর্তনখোলা নদী পারাপারে ব্যবহৃত খেয়া পারাপারও ৪ ও ৫ নভেম্বর বন্ধ থাকবে বলে আভাস মিলেছে। সেক্ষেত্রে খেয়া পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং মাঝি মাল্লাদের অত্যাচার বন্ধের দাবীতে সাধারণ নাগরিকদের ব্যানারে দুইদিন খেয়া বর্জনের ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিস্ট এক নেতা বলেছেন, সময় হলে সবকিছু জানতে পারবেন।

জনসমাগম ঠেকাতে আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর থ্রি-হুইলার চলাচলও বন্ধ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন থ্রি-হুইলার চালক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অসংখ্য চালকরা বলেন, সংগঠনের নেতারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের। ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে তারা ৪ ও ৫ নভেম্বর সবধরনের থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে বলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হয়নি।

সবধরনের গণপরিবহণ বন্ধের এসব আয়োজনকে সমাবেশ বানচাল করার ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, খুলনার ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলছে বরিশালে। তবে এতে লাভ হবেনা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঢাকার বাহিরে সবচেয়ে বড় গণজমায়েত হবে বরিশালে। এ জন্য আমরা বিকল্প পদ্ধতি করে রেখেছি। ৩-৪ দিন আগ থেকেই জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা বরিশালে এসে অবস্থান করবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo