৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ২:৫৭
শিরোনামঃ

এবার নজর বরিশাল ও খুলনায়

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শুক্রবার, মে ২৬, ২০২৩,
  • 362 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) গাজীপুর সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোটামুটি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটির নির্বাচন।

এই সিটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজিত হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ তুলেনি। গাজীপুরে ভোটের একদিন পর শুক্রবার (২৬ মে) বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনে প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। এবার দেশবাসীর নজর বরিশাল ও খুলনার দিকে। আগামী ১২ জুন এই দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে পাঁচ সিটির নির্বাচনকে ‘ট্রায়াল’ হিসেবে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। গাজীপুরের ভোটে তাদের এই ট্রায়াল মোটামুটি সাফল্যের সঙ্গে সূচিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তফসিল ঘোষণা করা আরও চারটি সিটিতে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য ভোট অনুষ্ঠান করতে পারলে কমিশন তাদের ভাবমূর্তি কিছুটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা। যদিও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জনের কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ অনেকটাই হারিয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এবারের পাঁচ সিটিরি নির্বাচনই সবচেয়ে বড় আয়োজন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে ‘আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য’বলে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। নির্বাচনে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি, অস্বচ্ছতার বড় কোনো অভিযোগ নেই- এটাকে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন তারা। তবে এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন তেমনটি হবে- এটা বলা যাবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের অভিমত, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকা কোনো নির্বাচনকে সরকার পরিবর্তন সম্পর্কিত কোনো নির্বাচনের সাথে মেলানো যাবে না।

গাজীপুরের নির্বাচন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, এই ভোটে দৃশ্যমানভাবে কোনো অশান্তি ঘটেনি। কোনো অনিয়ম ও সহিংসতা হয়নি বলেও আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এটা এই নয় যে, এই নির্বাচনটি যেভাবে হয়েছে দেশের সব নির্বাচন সেইভাবে হবে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে হারলেও এটাকে গণতন্ত্রের জয় হিসেবে দেখছে। শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হলে দেশের মানুষ যতটা খুশি হতেন, তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হওয়ায়। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই, জনগণকে ধন্যবাদ জানাই এবং বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানাই।’

কাদের বলেন, ‘এই নির্বাচনে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, বিএনপি এতদিন মিথ্যাচার করে আসছে— এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনা ওয়াদা পূরণ করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হারবে কি না তার চেয়ে বড় কথা হলো গণতন্ত্র জয়লাভ করেছে।’ তিনি গাজীপুরে জয়লাভ করা মেয়র জায়েদা খাতুনকে অভিনন্দনও জানান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির মতো বড় দল ভোটের লড়াইয়ে না থাকায় নির্বাচনের আমেজ এমনিতেই অনেকটা কমে গেছে। গাজীপুরে দলীয় বিভাজনের কারণে ভোটে কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছে। সামনে বরিশাল ও খুলনার মধ্যে খুলনায় ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। তবে বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সবার দাবি, ভোটের লড়াইয়ে শেষ হাসি যিনিই হাসুন, নির্বাচন যেন সহিংসতামুক্ত হয় এবং ভোটের ফলাফলের ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্যতা যেন থাকে।

বরিশাল ও খুলনায় ভোটের ডামাডোল শুরু

এদিকে দ্বিতীয় দফায় দেশের দুটি সিটি করপোরেশন বরিশাল ও খুলনায় এবার শুরু হয়েছে ভোটের ডামাডোল। শুক্রবার (২৬ মে) দুই সিটিতেই প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত একটানা ১৫ দিন চলবে ভোটের প্রচার-প্রচারণা। আগামী ১২ জুন এই দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

বরিশালে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নেমে পড়েন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এতে নগরীর পাড়া-মহল্লা মুখর হয়ে উঠে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ জুমার নামাজ আদায় করেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী হাউজিং জামে মসজিদে। পরে তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ভোট প্রার্থনা করেন। বিকেলে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কলাডেমায় উঠান বৈঠকে তিনি বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাকে বরিশালে প্রার্থী করেছেন। আমাকে ভোট দিয়ে আপনারা প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সুযোগ নিন।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম নগরের বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে সদর রোডে গণসংযোগ করেন। বিকেলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরানপাড়া, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রাতে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলীতে গণসংযোগ করেন তিনি।

এদিকে খুলনায়ও প্রতীক পেয়ে প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে জনগণের রায় মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ‘খেলা হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, নির্বাচনে জনগণ যে রায় দেবে, আমরা সেই রায় মেনে নেব। গাজীপুরে জনগণ যে রায় দিয়েছে, তা আমরা মেনে নিয়েছি। এর আগেও ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আমি পরাজিত হয়েছিলাম, তা মেনে নিয়েই এ অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করেছি।

তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। প্রতীক পেয়ে তিনি বলেন, আজকে আমরা প্রতীক পেয়েছি, আজ থেকেই আমরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করব। আমার মনে হয় নির্বাচনের পরিবেশ ভালো হবে না। কেননা, নির্বাচন কমিশন এতটা শক্তিশালী নয়। নির্বাচন কমিশন তো সরকারের আন্ডারে। সরকার যা বলবে তাই। যদি আওয়ামী লীগ সরকার চায়, তাহলেই শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আর যদি তারা সেটা না চায়, তাহলে হবে না। জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে। জনগণ তো ভয়ে কেন্দ্রে যাবে না। প্রতিটা ক্ষেত্রে জনগণ মার খেয়েছে। এই সরকারের প্রতি কোনো আস্থা নেই।

অপরদিকে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোটের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী আব্দুল আউয়াল। আর ভোটারদের মধ্যে বেশ উৎসাহ রয়েছে উল্লেখ করে জাকের পার্টির মেয়রপ্রার্থী এসএম সাব্বির আহম্মেদ বলেন, যদি পরিস্থিতি এমন থাকে, তাহলে বেশ ভালো হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo