৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সন্ধ্যা ৬:৪৮
শিরোনামঃ

জমি নিয়ে বিরোধ: ভোলায় ৬ বছরের শিশু মামলার আসামি!

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ রবিবার, জুলাই ১৬, ২০২৩,
  • 189 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ভোলার দৌলতখানে জমি বিরোধের জেরে হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে মো. শাকিল নামে সাড়ে ৬ বছর বয়সী শিশুকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় শিশু শাকিল উচ্চ আদালতের জামিনে আছে। এ ঘটনায় পুরো জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বড় ভাইয়ের নামের স্থানে ছোট ভাইয়ের নাম দেওয়া হলেও বয়স বড় ভাইয়েরটাই দেওয়া হয়েছে। আর এ কারণে ছোট ভাইকে বিনা কারণে বাবার কোলে চড়ে আদালতে এবং উকিলের চেম্বার ঘুরতে হচ্ছে।

প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু মো. শাকিল বর্তমানে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরিবর্তে বাবার কোলে চড়ে ঘুরছে আদালত প্রাঙ্গণ আর উকিলের চেম্বার। এমনকি তাকে হাজিরাও দিতে হচ্ছে আদালতে। তবে মামলার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন শিশুর পরিবার ও আইনজীবী।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল দৌলতখান উপজেলার দিদারউল্লা গ্রামের আবদুল মন্নান বাদী হয়ে একই এলাকার মো. শাকিলকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নামে দৌলতখান সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

মামলার অন্য অভিযুক্তরা হচ্ছেন শাকিলের বাবা মোখলেছুর রহমান, চাচা মাহে আলম, দাদা আবদুল খালেক, মা রুনু আকতার ও চাচি নাসিমা বেগম। অভিযোগে শাকিলের বয়স উল্লেখ করা হয় ২০ বছর। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী শাকিলের বয়স মাত্র ৬ বছর ৭ মাস (জন্ম তারিখ ২৩/১১/১৬)।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় শাকিলের নেতৃত্বে বাদী ও সাক্ষীদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত এবং নারীকে হয়রানি করা হয়েছে। ১২ এপ্রিল আদালত ১ থেকে ৪ নম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে এফআইআর নেওয়ার জন্য দৌলতখান থানাকে নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশে গত ১৫ এপ্রিল দৌলতখান থানায় মামলা রুজু হলে ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জামিন আনেন শাকিলসহ অন্য আসামিরা। নিম্ন আদালতে ওই জামিন বহাল থাকলেও এ পর্যন্ত চার বার হাজিরা দিতে হয়েছে তাদের।

গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বাবা মোখলেছুর রহমানের কোলে চড়ে ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসে সাড়ে ৬ বছরের শিশু মো. শাকিল। সঙ্গে আসেন মা রুনু আকতারও। প্রতিপক্ষের করা মামলার হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে বাবার সঙ্গে আদালতে আসতে হয়েছে শিশু শাকিলকে।

শিশু শাকিলের বাবা মোখলেছুর রহমান জানান, বাদী আবদুল মন্নানের সঙ্গে তাদের প্রায় দুই একর জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। তার জমি দখল করার জন্য প্রতিপক্ষ মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জমির ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করেছে।

সর্বশেষ তার শিশু ছেলেকে প্রধান আসামি করে সাজানো মামলায় তার পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। মামলায় যেই তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে তখন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঢাকায় চাকরি করা তার ভাই ও ৮৫ বছর বয়সী বাবাকেও আসামি করা হয়েছে শুধু হয়রানি করার জন্য।

শাকিলের মা রুনু আকতার জানান, ছেলে আদালতে এলে তাকেও সঙ্গে আসতে হয়। অপরিচিত স্থান ও অনেক মানুষজন দেখে ভয় পায় শিশু শাকিল। এ কারণে তিনিও সঙ্গে আসেন। এমন ভোগান্তি থেকে তিনি মুক্তি চান।

শাকিলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আদিল মাহামুদ রোম্মান জানান, এ বয়সের একটি শিশুর পক্ষে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া বা কাউকে পিটিয়ে আহত করা সম্ভব না। মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে অবৈধভাবে শিশুর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত এ শিশু হামলা বা মারামারি করেনি বলে স্বীকার করে মামলার বাদী আবদুল মন্নান জানান, ভুলবশত এজাহারে ওই শিশুর নাম এসেছে। শাকিলের বড় ভাইর নামের পরিবর্তে তার ছোট ভাইর নাম লেখা হয়েছে।

মামলার ৬ নম্বর সাক্ষী ও বাদীর ভাই মো. রুহুল আমিন জানান, তাদের বিরুদ্ধে শাকিলের বাবা একটি মামলা করেছিলেন এটা তার কাউন্টার মামলা। দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সত্য রঞ্জন খাশকেল রোববার (১৬ জুলাই) সকালে বলেন, আমরা মামলার তদন্তে গিয়ে দেখেছি আসামির বয়স ৬ বছর। আমরা সত্যতা পেয়েছি খুব শিগগির আদালতে তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, মামলাটি আদালত থেকে এসেছে, সেখানে শাকিলের বয়স ২০ দেখানো হয়েছে। কোর্টের আদেশে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে এসআই মো. মনির তদন্ত করছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়েও শাকিলকে শিশু হিসেবে দেখেছেন।

এসময় বাদীপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, মূলত শাকিলের ২০ বছর বয়সী বড় ভাই আছে। তার নামের স্থলে শাকিলের নাম ভুলে চলে এসেছে। ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, আদালতের আদেশে থানায় মামলাটি হয়েছে। মামলার তদন্তকাজ অনেকটাই শেষ।

সরেজমিনে যাচাই বাছাই করে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করবে। শিশুটি যেন আইনি সুযোগ সুবিধা পান সেই লক্ষ্যেই পুলিশ কাজ করছে। উল্লেখ্য, মামলার বাদী ও শিশু শাকিলের পরিবার পরস্পর আত্মীয়। এদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিভিন্ন আদালতে চারটি মামলা রয়েছে। শাকিল চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo