বানান ত্রুটি হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের বোর্ডের ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে। এ ভুলের কারণে সার্টিফিকেট পুনঃমুদ্রণ করে প্রদান করতে বোর্ডের অতিরিক্ত ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৯৪৫ টাকা খরচ হবে।
এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে তদন্ত টিম গঠন করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। অবশ্য ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা নয় বলে দাবি করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান। এদিকে, এ ঘটনায় দায়ীদের শনাক্ত করতে বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার যে সনদপত্র বা সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তার কাগজ কেনা হয় সাধারণত অস্ট্রেলিয়া থেকে। কোটেশনের মাধ্যমে কাগজ কেনার পর সরকার নিয়ন্ত্রিত সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে বোর্ডের মনোগ্রাম, তার নিচে বড় অক্ষরে শিক্ষা বোর্ডের ও পরীক্ষার সালসহ নাম ছাপা হয়। এর নিচের অংশ ছাপা হয় শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার বিভাগ থেকে। সেখানে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা-মাতার নাম, কেন্দ্রের নাম ও নম্বর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, প্রাপ্ত জিপিএসহ পরীক্ষার নাম এবং ফলপ্রকাশের তারিখসহ অন্যান্য বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়। নিচের অংশ ছাপার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতির পর একটি নমুনা সনদপত্র তৈরি করা হয়। ওই নমুনা ছেপে সংশোধনের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগসহ সংশোধনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে পাঠানো হয়। এরপর পরীক্ষানিয়ন্ত্রক চূড়ান্ত করলে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ প্রেসে ছাপার কাজ শুরু হয়।
২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ সকল পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। এরপরও সনদপত্রের নিচের অংশে রোল নম্বরের পর যেখানে পরীক্ষার নাম লেখা হয়েছে সেখানে ‘হায়ার’ (উচ্চ) শব্দটি ভুল বানানে ছাপা হয়েছে। বানান ভুল ধরা পড়ার পর ওই সনদপত্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ না করে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষা বোর্ডের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, একটি সার্টিফিকেট তৈরিতে ৮৯ টাকা করে খরচ হয়। এ হিসেবে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৪১টি সনদপত্রের জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের ব্যয় ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৯৪৫ টাকা গচ্চা যাবে।
এই বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে কিছু বলতে পারবো না। দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এই বিষয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘ভুলের কারণে সার্টিফিকেট বাতিল হয়েছে। কেউ তো ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে না। তারপরও এ ঘটনায় দায়ীদের শনাক্ত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দোষীদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘সার্টিফিকেট ছাপানো বন্ধ নাই; যেকোন শিক্ষার্থী জরুরি ভিত্তিতে তাদের সার্টিফিকেট নিতে আসলে আমরা তাৎক্ষণিক ছাপিয়ে দিয়ে দিচ্ছি। আমরা আশা করছি দ্রুত সময়ে ওই শিক্ষাবর্ষের সকল সার্টিফিকেট শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারব।