৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ৮:১৪
শিরোনামঃ

ঢাকায় ৫৬ ভাগ ট্রাফিক পুলিশ কানে কম শোনেন

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বুধবার, আগস্ট ৩১, ২০২২,
  • 214 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

 

আরেফিন আকন। পাঁচ বছর ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত। দায়িত্বের প্রয়োজনেই দিনের নির্ধারিত সময় থাকতে হয় সড়কে। সহ্য করতে হয় বিকট শব্দের অত্যাচার। বছরের পর বছর সড়কে থাকার প্রভাবে তিনি হারাতে বসেছেন শ্রবণশক্তি।

আলাপকালে আরেফিন বলেন, ‘প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় রাতে ঘুমাতে পারি না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। বউ-বাচ্চা ঘরে অপেক্ষায় থাকে। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে গিয়েও পারি না। একপ্রকার অস্বস্তি কাজ করে। অনেক কিছুই ভুলে যাই। এখন তো দেখছি চোখেও কম দেখছি। হার্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

শুধু আরেফিন আকন নন, রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করা বেশির ভাগ ট্রাফিক সদস্য ভুগছেন এমন সমস্যায়। শব্দ দূষণের সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। এজন্য বিশেষজ্ঞরা শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। না হলে এর চরম মাসুল জাতিকে গুনতে হবে বলে সতর্ক করেছেন তারা।

সম্পতি বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় ট্রাফিক বিভাগের কর্মরতদের ৫৬.৪% ভাগ পুলিশ কানে কম শোনেন। এর মধ্যে শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে হারানোর পথে ৯.৫%। প্রায় আট ভাগ পুলিশ কয়েক ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের পর উচ্চ রক্তচাপ, মেজাজ খিটখিটে, মানসিক চাপ, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়াসহ ক্লান্তি সমস্যায় ভোগেন।
রাজধানীর আহসান মঞ্জিল, আব্দুল্লাহপুর, মতিঝিল, শাহবাগ, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ এলাকা, তেজগাঁও, আগারগাঁও, মিরপুর-১০সহ গুলশান-২ এর মতো অভিজাত এলাকায় দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা কমবেশি সবাই শব্দ দূষণের কারণে নানা সমস্যা ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।

গুলশান-২ এ কর্মরত একজন ট্রাফিক সার্জন নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘কথা ভুলে যাই। দেখা যায় আপনি স্বাভাবিকভাবে একটা কথা বললেন, দ্বিতীয়বার শুধু নয় তৃতীয়বারও জিজ্ঞেস করতে হয়। দীর্ঘদিন রাস্তায় থাকার পর এখন মনে হয়, জোরে বলা ছাড়া শুনতে পাই না।’

গবেষণা বলছে, জীবন জীবিকার প্রয়োজনে বের হওয়া অনেক নাগরিকের মধ্যে পথচারী, দিনমজুর থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এই দূষণের কবলে পড়ে অজান্তেই হারাচ্ছেন শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা। অন্যদিকে দশ বছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া এক তথ্য বলছে, বাংলাদেশের শতকরা ২০ শতাংশ মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা লোপ পেয়েছে। যার মধ্যে ২৬ শতাংশ শিশু। এটা স্পষ্ট, গত দশ বছরে বেড়েছে দূষণ। সে হিসেবে বেড়েছে শ্রবণশক্তি হারানো মানুষের সংখ্যাও।

এ বিষয়ে শ্রবণ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর শব্দ দূষণের বিশেষ প্রভাবটি হলো শ্রবণশক্তি হ্রাস। স্কুলগামী শিশুদের ওপর শব্দ দূষণের প্রভাব বেশি, অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে ক্লাস করার জন্য তারা ইয়ারফোন ব্যবহার করে, পাশাপাশি অতিরিক্ত গান-বাজনা ইত্যাদি শোনার ফলে পড়াশোনায় অমনোযোগিতা দেখা দিচ্ছে এবং তাদের খাবারে অরুচি সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’

এ বিষয়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘এমন তথ্য উদ্বেগের। পরীক্ষা করলে দেখা যাবে শব্দ দূষণের প্রভাবে আমরা রাজধানীর বেশির ভাগ মানুষ কানে কম শুনছি।’

কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে বেড়েছে শব্দ দূষণের তীব্রতা। এর সাথে শারীরিক জটিলতা তো বাড়ছেই। যার প্রমাণ মিলে ইএনটি রোগী বাড়ার চিত্র দেখলেই।’

শব্দ দূষণ রোধে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে এই গবেষক বলেন, ‘যেহেতু আমরা শব্দ দূষণের উৎসগুলো শনাক্ত করতে পেরেছি, একটি একটি করে এসব উৎস বন্ধ করতে পারলেই অনেকটাই নিরাময় সম্ভব।’

এ বিষয়ে জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউট অডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. জোনায়েদ রহিম বলেন, ‘এমন তীব্রমাত্রায় যদি কেউ নিয়মিত শব্দ শোনেন, সে ক্ষেত্রে শ্রবণ ক্ষমতা কমবে। কেউ কেউ বধির হয়ে যেতে পারেন। যদি প্রশ্ন আসে কতটা শুনতে পারবে, তাহলে যেখানে যে মাত্রার কথা বলা হয়েছে এর বেশি শোনা যাবে না। শব্দ দূষণের প্রভাবে কর্মক্ষমতা কমবে তাদের।’
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘শব্দ দূষণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এখানে আমাদের নাগরিকরা সব রকমের দূষণের সঙ্গে জড়িত। এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন তাদের সচেতনতা।’

 

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo