জেলা পরিষদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বরিশালের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এখন পর্যন্ত ভোটারদের কাছে ছুটতে দেখা যায়নি। প্রায় সব প্রার্থীর ব্যস্ততা এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছনে।
বরিশালে কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন?
তফসিল ঘোষণার পরপরই আলোচনা শুরু হয়েছে–কে পাবেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন আর কে হচ্ছেন বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তবে এ নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য কোনো দলের তৎপরতা নেই বরিশালে।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বেশ কয়েকজনের ভাষ্য: নির্বাচনে যেসব জনপ্রতিনিধি ভোটার, তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। যার কারণে দলীয় সমর্থন পেলে এবং বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে চেয়ারম্যান হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ জন্য দলের মনোনয়ন পাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা।
এরই মধ্যে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বরিশালের ছয় প্রার্থী। তারা হলেন: জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মো. মঈদুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীর, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আনিছুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন দিলু।
তবে মনোনয়ন চেয়ে ফরম সংগ্রহ করেও শেষ দিনে নাটকীয়ভাবে তা জমা দেননি জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নির্দেশে তিনি মনোনয়ন ফরম জমা দেননি।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দিতে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিতরণের পরই আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ফরম জমা দিয়েছি। কাল নমিনেশন বোর্ডের মিটিং। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, নির্বাচন করব। না দিলে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করব।’
জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু বলেন, ‘আমি ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করি। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। যার কারণে আট মাস বরিশাল কারাগারে ছিলাম। এ ছাড়া ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৫ আগস্ট নগরীতে মিছিল বের করি এবং ৩৪ মাস বরিশালে কারাগারে আটক ছিলাম। আমি জাতির পিতার আদর্শে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। আমি মনে করি, আমি এ পদের যোগ্য এবং নেত্রী অবশ্যই আমার যোগ্যতা মূল্যায়ন করবেন।’
জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক মইদুল ইসলাম বলেন, ফরম জমা দিয়েছি। দলের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।’
এদিকে সমিতির নাম করে অর্থ লুটসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিএম কলেজের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসেন এবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী।
ভুক্তভোগী বরিশাল হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ বিশু বলেন, ‘একটি সমিতির নাম করে কয়েকশ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিএম কলেজের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসেন। আমি নিজেও তার কাছে ৫ লাখ টাকা পাই।’ শুধু বিশ্বজিৎ ঘোষ নন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি ভিপি আনোয়ারের বিচারের দাবি জানান।
এদিকে অর্থ লোপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিএম কলেজের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সমিতির টাকা আমি লুট করিনি। সমিতির দুই নারী কর্মচারী সব টাকা লুট করে ভারতে চলে গেছেন। সমিতিতে আমারও টাকা ছিল। এ ছাড়া আমি ছাত্র রাজনীতি করেছি। আমার পরিবারের কোনো সম্পদের অভাব নেই।’
এদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীরের। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কেউ এখনও সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি।
আগামী ১৭ অক্টোবর বরিশালসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। আগামী ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।