৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৩:৩৪
শিরোনামঃ

সমুদ্র সৈকতে মন্দা ঘোড়া ব্যবসায়

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২,
  • 187 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

কক্সবাজারে ঘোড়া ব্যবসায়ীদের চরম দুঃসময় চলছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অন্যদিকে আয় রোজগার কমে যাওয়ায় সংকটে পড়েছেন সৈকতের ঘোড়া ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্ট ছাড়াও ইনানী, হিমছড়ি, পাটুয়ারটেক ও দরিয়ানগরে প্রায় ১২০টি ঘোড়ার বিচরণ রয়েছে। ঘোড়াকে কেন্দ্র করে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ ঘোড়ার ব্যবসায় সাথে জড়িত আছে।

কক্সবাজার ঘোড়া ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৭। এদের সবার ঘোড়া রয়েছে ৭০টি। এদের মধ্যে ৩০টি ঘোড়া খাদ্যের অভাব ও বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাকি ৪০টি ঘোড়া সৈকতে পর্যটক চড়িয়ে বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে। সমিতির বাইরে ব্যক্তি মালিকানাধীন আরো অন্তত ৫০টি ঘোড়া রয়েছে।

ঘোড়া ব্যবসায়ীরা বলছে, সৈকতে ঘোড়া টেনে তাদের সংসার চলে না। দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঘোড়া টেনে জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। যে হারে পণ্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে সে অনুপাতে ঘোড়া টেনে তারা সুবিধা করতে পারছে না।

 

সারাদিন ঘোড়া টেনে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে শুধু ঘোড়ার খাবার কিনতে চলে যায়। একটি ঘোড়ার খাবারের জন্য প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা দরকার হয়৷ সারাদিন ঘোড়া টেনে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ১ হাজার -১২শ টাকা। কোনো কোনো সময় একেবারে আয়ও হয় না। শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হয়। গত চার মাস ধরে মন্দা যাচ্ছে ঘোড়া ব্যবসায়। সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার সৈকতে কিছুটা পর্যটক থাকে ওই সময় কিছু টাকা ইনকাম হয়। সপ্তাহের পাঁচদিন টানাটানিতে চলে তাদের সংসার। অনেক সময় মালিকের খাবার কিনতে টাকা না থাকলে অভুক্ত থাকতে হয় ঘোড়ার।

 

অনেকে ঋণ নিয়ে ঘোড়া কিনেছেন, প্রতি সপ্তাহে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। ঘোড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, সৈকতে ঘোড়া টিকিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোড়ার জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা গেলে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করতে পারবেন তারা।

সৈকতে ঘোড়া ব্যবসায়ী মো. মামুন বলেন, এক সময় আমার ঘোড়া ছিল ১৭টি ঘোড়ার খাবার দিতে না পারায় করোনাকালে আমার ৮টি ঘোড়া মারা যায় টাকার অভাবে আরও ৬টি ঘোড়া বিক্রি করে দিয়েছি। এখন তিনটি ঘোড়া আছে তাদের খাবার দিতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চারমাস ধরে বীচে পর্যটক কম আসছে। সারাদিন ঘোড়া টেনে যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে ঘোড়ার খাবারের খরচও আসে না।

 

ঘোড়া মালিক নুরুল আলম বলেন, বর্তমানে বীচে মানুষ নেই। যার কারণে ব্যবসা হচ্ছে না। এক সময় আমি রিকশা চালাতাম, রিকশা চালানো কষ্ট হয়ে যাওয়ায় চার বছর আগে ঘোড়া নিয়েছিলাম। প্রথমে ভালই চলছিল, ইদানিং এ ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। দৈনিক আয় ১ হাজার টাকা হলে ৫০০-৬০০ টাকা শুধু ঘোড়ার খাবারে চলে যায়। বাকি সামান্য টাকায় আমার ছেলেদের পড়াশোনার খরচ এবং সংসার চলে না। ফলে দুশ্চিন্তায় যাচ্ছে জীবন। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সহযোগিতা করা গেলে উপকৃত হতাম।

ঘোড়া মালিক রোজিনা আক্তার জানান, আমার ঘোড়া আছে ১১টি। জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার ব্যবসা হচ্ছে না। গত ছয়মাস আগেও এক বস্থা ভুষি কিনেছি ১ হাজার থেকে ১১শ টাকায়, সেই ভুষির দাম এখন ১৯শ টাকা। আমি ব্যবসা করতে পারছি না। ঘোড়ার পিছনে খরচ বেড়ে গেছে। সৈকতে তেমন আয়ও নেই এখন। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে আমার। এখন ভাবছি এই ব্যবসা ছেড়ে অন্যকিছু করবো।

কক্সবাজার ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদা বেগম জানান, ঘোড়া ব্যবসায়ী সমিতিতে ২৭ জন সদস্য আছে। সবার ঘোড়া আছে ৭০টি। সমিতির বাইরে ব্যক্তি মালিকানাধীন আরও অন্তত ৫০টি ঘোড়া রয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক মানুষ এই ঘোড়া ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

 

ফরিদা আরও জানান, বর্তমানে ঘোড়া ব্যবসায় খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে। একদিকে বেড়েছে পণ্যের দাম, অন্যদিকে সৈকতে পর্যটক কম। আমার ৩টি ঘোড়ার জন্য প্রতিদিন ২৭শ টাকা মতো খরচ যায়। আমরা সরকারের কাছে ঘোড়ার জন্য কিছু খাবার সহযোগিতা হিসেবে চাই।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন , কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে একটি আকর্ষণীয় বিনোদনের মাধ্যম হলো ঘোড়া। এই ঘোড়া গুলোর মাধ্যমে কক্সবাজারে আগত দেশী-বিদেশী পর্যটকরা আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। আমি মনে করি ঘোড়া গুলোকে সংরক্ষণ করা উচিত, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। বিশেষ করে, দুর্বল ঘোড়া গুলোকে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আর এই ঘোড়া গুলোর সাথে যারা সংশ্লিষ্ট রয়েছে, বিশেষ করে ঘোড়া মালিকরা এখন কষ্টে দিনাতিপাত করছে, এনজিওরা চাইলে এসব ঘোড়া মালিকদের সহযোগিতা করা যায়। এনজিওদের ঋণ ও স্বল্প সুদের মাধ্যমে ঘোড়ার খাদ্য সংকট নিরসন করা সম্ভব।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, করোনাকালে আমাদের সব বিষয়ে একটি বিশেষ পরিস্থিতি ও সংকটময় ছিল। তখন সরকার নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করেছিল। এখনতো পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এই মুহূর্তে করোনার বিশেষ সংকটময় পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে, এখন কেউ যদি কোনো কথা বলে, সেটি কতটা বাস্তব সম্মত তাও বিবেচনায় নিতে হবে।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo