৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৩:৩৪
শিরোনামঃ

বরিশালে ১৪ টিসহ দেশে ১০০ সেতুর উদ্বোধন ৭ নভেম্বর

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, অক্টোবর ২৯, ২০২২,
  • 193 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

সারা দেশে একসঙ্গে মোট ১০০ সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ৭ নভেম্বর। সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে।

তাতে উদ্বোধনের জন্য ২৯ অক্টোবর তারিখ উল্লেখ করা থাকলেও সেতুগুলো উদ্বোধনের জন্য ৭ নভেম্বরকে নির্ধারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এই ১০০ সেতুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেতু চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫টি। সবচেয়ে কম কুমিল্লায় একটি। এ ছাড়া সিলেটে ১৭, বরিশালে ১৪, ময়মনসিংহে ছয়, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও রংপুরে পাঁচটি করে এবং ঢাকা বিভাগে দুটি সেতু রয়েছে। সব মিলিয়ে সেতুগুলোর মোট দৈর্ঘ্য পাঁচ হাজার ৪৯৪.১৩ মিটার।

সরকারের অর্থায়নে নির্মিত এসব সেতুতে ব্যয় করা হয়েছে ৮৭৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ছোট বড় নানা দৈর্ঘ্য-প্রস্থের হওয়ার পরও এর কোনোটিকেই কালভার্ট বলার সুযোগ নেই। সংজ্ঞা অনুযায়ী, জলধারার ওপর নিয়মিত নৌযান চলাচলের পথ বন্ধ করে সড়ক যান চলাচলের পথ করা হলে সেটাকে কালভার্ট বলা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেসব নৌপথে যান চলাচল করত সেগুলো স্বাভাবিক থাকবে।

তাই জলধারার ওপর সড়ক যান চলাচলের এসব পথেও সেতু বলতে হচ্ছে। একসঙ্গে ১০০ সেতুর উদ্বোধন প্রসঙ্গে সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, “এটাকে আমরা বলছি শত সেতুর উদ্বোধন অপার উন্নয়নের সম্ভাবনা। এই শত সেতুর মধ্যে জরাজীর্ণ, বিধ্বস্ত, দুর্ঘটনাপ্রবণ সেতুগুলোকে অপসরণ করেছি। সিলেট ও পার্বত্য অঞ্চলে বেশ কিছু ‘মিসিং লিংক’ ছিল। এই সেতুগুলোর মাধ্যমে সেটা দূর হয়েছে।

সিলেটে যে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো বন্যায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বন্যাপরবর্তী সময়ে সেতুগুলো দ্রুত মেরামত করে চলাচলের উপযুক্ত করা হয়েছে। ’দৈর্ঘ্যের বিচারে সবচেয়ে বড় সেতু সিলেটের সুনামগঞ্জের রাণীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতু। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৭০২.৩২ মিটার। সবচেয়ে ছোটর তালিকায় একসঙ্গে চার সেতুর অবস্থান। সবগুলোই খাগড়াছড়িতে। সেতুগুলো হলো তবলছড়ি সেতু, তাইন্দং সেতু, কৃষি গবেষণা সেতু ও হাতিমারাছড়া সেতু। এগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৬.৫৯ মিটার করে। সওজের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের কাছে এসব সেতুর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুরুত্বপূর্ণ নয়। যোগাযোগব্যবস্থাকে উন্নত করাই মুখ্য। তাই খাগড়াছড়ির সেতুগুলো অন্য সব সেতুর তুলনায় দৈর্ঘ্যে ছোট হলেও বাস্তবতার বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সেতুগুলোর মাধ্যমে পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলের জনগণ ও তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী খুব সহজেই এখন মূল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। সম্প্রতি নড়াইলে মধুমতী সেতুর উদ্বোধন করতে গিয়ে একসঙ্গে ১০০ সেতুর উদ্বোধনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ২৯ অক্টোবর তারিখ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উদ্বোধনের সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। কিন্তু ওই দিনের পরিবর্তে ৭ নভেম্বর উদ্বোধনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের দিন সম্পর্কে জানতে চাইলে সওজর প্রধান প্রকৌশলী মনির হোসেন পাঠান বলেন, ‘আমরা আশা করছি ৭ নভেম্বর। বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হলে সেদিনই উদ্বোধন হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা তারিখ পেয়েছি। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সবগুলো সেতু উদ্বোধন করবেন। ’উদ্বোধনযোগ্য ১০০ সেতুর তালিকার সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের দুই সেতুর মধ্যে একটির দৈর্ঘ্য ১০৩.৪৩ মিটার আরেকটির দৈর্ঘ্য ৮৫.১৫ মিটার। এই দুই সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। ময়মনসিংহের ছয় সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৯৪.১১ মিটার। এতে ব্যয় হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম বিভাগের ৪৫টি সেতুর মোট দৈর্ঘ্য এক হাজার ৯০৭.৬১ মিটার। সর্বনিন্ম দৈর্ঘ্যের চারটি সেতু চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে অবস্থিত।

এসব সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৩৮ কোটি ২৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। কুমিল্লায় একটি সেতু তৈরিতেই খরচ হয়েছে ১১ কোটি ৯৫ হাজার টাকা। সিলেটের ১৭টি সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৫৮৭.১৮ মিটার। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্যের সেতুটি সিলেটের সুনামগঞ্জে। এই ১৭ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ২৯০ কোটি ৭০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। গোপালগঞ্জে ২১৮.৫৭ মিটার দৈর্ঘ্যের পাঁচ সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩২ কোটি ৫১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। বরিশালে ১৪ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৫৫৮.৮০ মিটার। এতে খরচ করতে হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রাজশাহীর পাঁচ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১৭৬.৯০ মিটার। এসব সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৮ কোটি ৪৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। আর রংপুরের ৩০১.৬৪ মিটার দৈর্ঘ্যের মোট পাঁচ সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে ৪৭ কোটি ২৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এই ১০০ সেতুর মধ্য সীমান্ত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকাও রয়েছে। বেশির ভাগ সেতুই স্থানীয় এলাকার নামে নামকরণ হয়েছে। এসব সেতু এক প্রকল্পের অধীনে নির্মাণ করা হয়নি। বেশির ভাগ সেতুর দৈর্ঘ্য ছোট হওয়ার তাতে মাত্র একটি স্প্যান বসেছে। এক স্প্যানের সেতুর সংখ্যা ৬৯টি। সবচেয়ে বড় রাণীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতুতে ১৫টি স্প্যান রয়েছে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটির অধীনে বর্তমানে দেশে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে ১৩ হাজার ৮০০টি কালভার্ট ও সাড়ে চার হাজার সেতু রয়েছে। এই সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে তিন হাজার ৯৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, চার হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক ও ১৩ হাজার ৫৮৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, ‘আমাদের এই নদীমাতৃক দেশে যোগাযোগব্যবস্থার বড় অন্তরায় হচ্ছে নদীপথ। ব্যবসা-বাণিজ্যের ধারাবাহিকতার জন্য এটা একটা বড় বাধা। যেকোনো সেতু হলেই কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়। তাতে পরিবহনের সময় কমে যায়। এটা সরাসরি কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে।

এক প্রশ্নের জবাবে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে শামছুল হক বলেন, ‘নদীর নাব্যতা ঠিক রেখে এবং উচ্চতায় নদীর জায়গা ছেড়ে এই সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে কি না সেটা বড় জিজ্ঞাসা। আবার সেতুর দুই খুঁটির মাঝের দূরত্ব পর্যাপ্ত আছে কি না তাও দেখতে হবে। কারণ অতীতে যত সেতু হয়েছে; নৌপথটাকে সংক্ষিপ্ত করে এবং নাব্যতা ও উচ্চতা না রেখে। সেই উন্নয়ন কিন্তু আবার সমন্বিত উন্নয়ন হলো না। সড়কের উন্নয়ন দরকার কিন্তু একই সঙ্গে যেন আমরা নৌপথটাকেও সম্মান করি। ’

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo