বরিশাল বিভাগের ৩৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২৪টিরই অপারেশন থিয়েটার অচল। মাসোহারা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠানোর অভিযোগ ওঠেছে কিছুসংখ্যক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার আছে; কয়েক কোটি টাকায় কেনা যন্ত্রপাতিও আছে। কিন্তু তাতে অপারেশন হয় না। প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরেও অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই উপজেলাবাসীর।
নাছিমা বেগম নামে এক রোগী বলেন, ‘কিছু হলেই আমাদের বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো অপারেশন হয় না। একটু চেকআপ করাতে হলেও বরিশাল নগরীর কোনো বিকল্প নেই।’
হুমায়রা ইয়াসমিন নামে আরেক রোগী বলেন, ‘ছোটখাটো রোগ হলে আমরা এখানে সেবা পাই। কিন্তু অপারেশনের জন্য বরিশালে যেতে হয়। একজন গর্ভবতী নারীর জন্য এ বিষয়টা যে কতটা কষ্টের এবং ভোগান্তির, তা বলে বোঝানো যাবে না।’
‘আমরা দ্রুত এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার চালুর দাবি জানাই। বরিশাল যেতে-আসতে প্রচুর পরিমাণ খরচ। আর সঙ্গে ভোগান্তি তো আছেই। আমরা এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে চাই,’ বলেন ফরিদ নামে আরেক রোগী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুবাস সরকার জানান, অপারেশন থিয়েটার পরিচালনায় লোকবল না থাকার কথা। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শুধু বাবুগঞ্জেই নয়, জেলার ১০ উপজেলার ৬টিতেই এমন ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে, উপজেলা কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবের কাছ থেকে মাসোহারা নেন। আর সেখানেই তারা রোগী পাঠান।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘হাসপাতালের পাশে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো রমরমা ব্যবসা করছে। আর ডাক্তাররা দুহাত ভরে এখান থেকে কমিশন বাণিজ্য করছেন। আশা করছি সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াবেন।’
জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতি নষ্ট এবং জনবলের অভাবে অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে- এসব অজুহাত দেখিয়ে অপারেশন বন্ধ রাখা যাবে না।
তবে চিকিৎসক সংকট নিরসনের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অপারেশন থিয়েটার দ্রুত সচল করা হবে জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল।
বরিশাল বিভাগে ছয়টি জেলা হাসপাতাল বাদে ৩৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এর মধ্যে অপারেশন থিয়েটার সচল আছে মাত্র ১১টি উপজেলায়। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে।
উল্লেখ্য, সারা দেশের ৫৯ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের এক্স-রে করা হয় না। কারণ, সেখানে হয় এক্স-রে যন্ত্র নেই, আর থাকলেও তা নষ্ট। ৪১ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয় না। পাশাপাশি ৬৩ শতাংশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা নেই। বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন চিত্র পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিক্স বিভাগের একদল গবেষক।
তাদের করা এক জরিপে দেখা গেছে, ১১ শতাংশ জেলা হাসপাতালে এক্স-রে ও ইসিজি পরিষেবা নেই। ৭৩ শতাংশ উপজেলা হাসপাতালে হয় না ইসিজি। একটি জেলা হাসপাতালেও চিকিৎসকদের ব্যবহার উপযোগী ডরমিটরি বা কোয়ার্টার নেই।