৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ দুপুর ১২:৫৯
শিরোনামঃ

লঞ্চে ভাড়া অর্ধেক করার পরও মিলছে না যাত্রী

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বুধবার, মার্চ ২২, ২০২৩,
  • 227 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

একসময় দেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল লঞ্চ। সময় বেশি লাগলেও লঞ্চে যাতায়াত যেমন আরামদায়ক, তেমনি ভাড়াও তুলনামূলক কম। কিন্তু দীর্ঘদিনের সেই যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন হুমকির মুখে। সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় বিশেষ করে পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলোতে যাত্রী সংখ্যায় ধস নেমেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। ফলে শতাব্দীর বেশি সময় ধরে চলা এই সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা টু বরিশাল রুটে ১৮টি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করত, যা এখন ৬টিতে নেমে এসেছে। তিনটি লঞ্চ বরিশাল থেকে আসে, তিনটি ঢাকা থেকে যাত্রী পূরণ হওয়ার পর ছাড়ে। বছরখানেক আগেও যেখানে কানায় কানায় পূর্ণ থাকত লঞ্চ, সেখানে এখন পুরো ভিন্ন চিত্র। ভাড়া কমিয়ে অর্ধেক করার পরও যাত্রী মিলছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোটেশন করেও এই লঞ্চ সার্ভিস টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রী আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে লঞ্চ সার্ভিসের এই অবস্থা হয়েছে। ২০০ বছরের লঞ্চ সার্ভিসের বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে একটি লঞ্চ সপ্তাহে তিনদিনের বেশি চলে না। নিয়মিত লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি কোম্পানি তাদের বেশিরভাগ লঞ্চ অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এমনকি ক্রেতা না পাওয়ায় লঞ্চ কেটে লোহার দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন কেউ কেউ।

বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ এমভি কীর্তনখোলা-১ নিয়মিত যাত্রী না পেয়ে ক্রমাগত লোকসান হচ্ছিল। অবশেষে লঞ্চটি বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু লঞ্চ কেউ এটি কিনতে রাজি না হওয়ায় অবশেষে কেটে লোহার দরে বিক্রি করা হয়েছে। শুধু কীর্তনখোলাই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমপক্ষে ১০টি লঞ্চ এভাবে কেটে বিক্রি করা হয়েছে।

লঞ্চ ব্যবসার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন লঞ্চ মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে এই ব্যবসা হুমকির মুখে। লাভের পরিবর্তে দিনের পর দিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। তারা বলছেন, সরকার যদি না তাকায় তাহলে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব, অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে।

এম কে শিপিং লাইনের ম্যানেজার আলী আজম বলেন, আমাদের ৫টি লঞ্চ রয়েছে। সবগুলো প্রতিদিন চলে না, শিডিউল করে আমরা চালাই। ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-বরগুনা, ঢাকা-ইলিশা রুটে আমাদের একাধিক লঞ্চ চলাচল করত। কিন্তু এখন একটি লঞ্চ একদিন চললে পরদিন বন্ধ থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। যাত্রীর অভাবে লঞ্চগুলো নিয়মিত চলাচল না করায় ফিটনেস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এমভি মানামী লঞ্চের সুপারভাইজার ইসমাইল হোসেন বলেন, আগের তুলনায় যাত্রী একবারেই নাই। আমাদের এত বড় লঞ্চে চারশ’ যাত্রী নিয়েও যেতে পারি না, যেখানে ধারণক্ষমতা বারশ’। ৪৬ জন স্টাফের বেতন তুলতে হিমশিম খেতে হয়। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে সে তুলনায় লঞ্চের ভাড়া বাড়েনি। তারপরও আমরা আগের মতো যাত্রী পাচ্ছি না।

পারাবত লঞ্চের কেরানি মনির আহমেদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, কিন্তু লঞ্চের ভাড়া আমরা বাড়াইনি। বরং সরকার যা ঠিক করেছে তার থেকে কমিয়েছি। আগে ঢাকা-বরিশাল রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৬৭২ টাকা, আমরা ৩০০-৩৫০ টাকা নেই। কেবিনের ভাড়া ৩২০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও আমরা ১৬০০ টাকা নেই। তেলের দামের সাথে আমাদের ভাড়ার কোনো সামঞ্জস্য নেই। আমাদের মেরামত ও ম্যানুফ্যাকচারিং খরচও বেড়েছে।

বরিশালগামী সাইফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, আমরা আগে লঞ্চে চলাচল করতাম, এখন পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে দ্রুত যাওয়া যায়। তাই এদিকে আর আসা হয় না। সদরঘাটে এখন আগের মতো ভিড়ও নাই।

Specialবরগুনার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, লঞ্চের ভাড়া কম হলেও দ্রুত যাওয়ার জন্য সবাই বাসে চড়ে। একসময় সদরঘাটে লোকজনের প্রচণ্ড চাপ থাকতো, এখন কর্মচারীরা ডেকেও যাত্রী পায় না।

এসব বিষয়ে কথা বলতে বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তাকে কল দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন যুগ্ম পরিচালক বলেন, এ বিষয়ে আপনি সদরঘাটের লোকজনের সাথে কথা বলেন। আমরা এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি না।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo