দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য এসব নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিএনপি নেই কোনো প্রক্রিয়ায়। দলটি এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে অনড় রয়েছে। তবে অতীতে কয়েকটি নির্বাচনে দলের নেতারা বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে যে ব্যবস্থা নিত এবার সেটা নেবে না বিএনপি। স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ব্যাপারে দলটি অনেকটা নমনীয় অবস্থানে রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপির টার্গেট সরকারকে চাপে রাখা। তারা সরকারকে চাপে রাখতে নানামুখী কৌশল নিয়েছে। এর মধ্যে সিটি নির্বাচনে যেন সরকারদলীয় প্রার্থীরা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারেন সেজন্য দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলে তাকে বাধা দেবে না। সূত্রে জানা গেছে, নৈতিক কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া নেতাদের বহিষ্কারের চিঠি দেওয়া হতে পারে। তবে নিরুৎসাহিত করা হবে না৷
জানা গেছে, পাঁচ সিটিতে আগে থেকেই বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রস্তুত আছেন৷ সবার আগে আলোচনায় আছেন সিলেটের মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী৷ গতকাল রোববার (১৬ এপ্রিল) তিনি লন্ডন থেকে সিলেটে ফিরেছেন। তাকে বিমানবন্দরে ব্যাপক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থিতার গুঞ্জন তিনি নিজেও জিইয়ে রেখেছেন।
দেশে পৌঁছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরিফুল হক বলেন, ‘আপনারা জানেন আমার দল বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না। আমি আমার এলাকার, সিলেটের মানুষের এবং দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’
নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, একটা সিগন্যাল আছে। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে খুব অল্প সময়ের ভেতর আমি আপনাদের, গণমাধ্যমকে ডেকে খোলাসাভাবেই আমার যেটা সিগন্যাল আছে সেটা জানিয়ে দেবো। এক্ষেত্রে আমি সিলেটের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিও শ্রদ্ধা রাখব, আবার দলের সিদ্ধান্তের প্রতিও শ্রদ্ধা রাখব।’
দলীয় নেতাদের সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনেই অংশ নেব না৷ কেউ যদি সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় তাকে বহিষ্কার করা হবে৷ তারপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আমাদের তোর আর কিছু বলার থাকবে না৷’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না৷ এখন সিটি নির্বাচনে কেউ স্বতন্ত্র অংশ নিলে সেটা তাদের ব্যাপার৷ আমরা এ ব্যাপরে কিছু জানি না৷’
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট। খুলনা ও বরিশালে ১২ জুন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে ভোট। পাঁচ সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আওয়ামী লীগের ৪১ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সভায় পাঁচজন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী ও খুলনায় প্রার্থী বদল না করলেও গাজীপুর ও বরিশালে প্রার্থী বদল করেছে। এছাড়া সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়াই করা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মারা যাওয়ায় এখানেও নতুন প্রার্থী দিয়েছে দলটি।
বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে এবং দলের সবুজ সংকেত থাকলে সিলেটে আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে। এছাড়া গাজীপুরে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে সেখানেও নৌকার প্রার্থী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।