৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বিকাল ৩:৫০
শিরোনামঃ

হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শুক্রবার, আগস্ট ১২, ২০২২,
  • 201 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে মোটা, সরু সব ধরনের চালের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারিতে ৩ থেকে ৪ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে বেঁচে থাকার জন্য জরুরি এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। কয়েক হাত ঘুরে এই চাল খুচরা ক্রেতারা কিনতে গিয়ে উঠছে নাভিশ্বাস।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন জ্বালানি তেলের দাম ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্যার কারণে এবছর হাওড়ে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। অন্যান্য এলাকায়ও প্রকৃতিক দুর্যোগে ফলন বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৪ মণ কমেছে। ফলে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন কম হওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় সরকার আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে ডলার–সংকটের কারণে আমদানিতে গতি নেই। বাড়তি দামে এখন বড় চালানে চাল আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা৷ নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও হাস্কি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মোটা চাল স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এসব চাল ৫ থেকে ৬ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে।

পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৮ থেকে ৬৬ টাকা। নাজিরশাইল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৪ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা। আটাশ চাল প্রতিকেজি ৫৩ থেকে ৫৯ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। পাইজাম ৫০ থেকে বেড়ে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাস্কি চাল ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৩ হয়েছে। মোটা স্বর্ণা প্রতিকেজি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিছু কম টাকায় চাল কিনতে রাজধানীর কেরাণীগঞ্জ থেকে বাবুবাজার আড়তে এসেছেন আজিম হোসাইন পারভেজ। তিনি জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। দুদিন আগে মিনিকেট চালের বস্তা (৫০ কেজি) কিনেছি তিন হাজার ২৫০ টাকায়। আজ সেই চালই তিন হাজার ৪০০ টাকা চাইছে। অর্থাৎ প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। এই দোকান থেকেই বেশিরভাগ সময় চাল নেই। দোকানিরা বলছেন, কাল নাকি আরও বাড়বে। কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আজ চাল কিনতে এসে চোখে পানি চলে এসেছে। স্বল্প আয়ের মানুষ। এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে আমরা কোথায় যাবো। না খেয়ে মারা যাবো। আমাদের ব্যয় বাড়লেও আয় তো বাড়েনি।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে মিল মালিকদের বিকল্প উপায়ে ধান থেকে চাল করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় তাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সামনে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। এদিকে আমদানি কম হচ্ছে। যেটুকু বাজারে এসেছে, সেটাও দেশি চালের দামের প্রায় সমান।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের কারণে যে শুধু ভাড়া বেড়েছে তা নয়। চাল প্রক্রিয়াকরণের খরচও বেড়েছে। সেজন্য মিলগেটে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সামনে দাম আরও বাড়বে। বাজারে সবচেয়ে কম দামের চাল গুটি স্বর্ণা। এই মোটা চালও প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বস্তা দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা।

বাদামতলি ঘাটের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাউসার বলেন, তেলের দামের জন্য সব কিছুর দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দামও বেশি ফলে সরকার আমদানির অনুমতি দিলেও আমদানি কম হচ্ছে। ফলে বাজারে চালের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। আর মিল মালিকদের কাছে যে চাল আছে সেটা বেশি দামের আশায় বাজারে ছাড়ছে না। তাই সরকারকে মজুদ পরিস্থিতি ও নতুন চাল না ওঠা পর্যন্ত মানে আগামী বৈশাখ মাস পর্যন্ত কী পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সেটার হিসাব করতে হবে। সেভাবে আমদানি করতে হবে। নইলে দেশে চালের সংকট দেখা দেবে। শুধু বেসরকারি পর্যায়ে আমাদনি করলে হবে না, সরকারকেও আমদানি করতে হবে। আমদানি না করলে চালের দাম আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।

বাবুবাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা ও সরকার ট্রেডিং এজেন্সির মালিক মো. ইব্রাহিম জানান, প্রতিদিন মিলগেটে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়ছে। তিন-চারদিনের ব্যবধানে সেটা ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভালো মানের ব্র্যান্ডের মিনিকেট এখন বস্তাপ্রতি তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্র্যান্ড বাদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কম মূল্যে মিলছে। বর্তমানে পাইকারিতে প্রকারভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকায়। রশিদ ব্র্যান্ডের চাল কয়েকদিন আগেও তিন হাজার ২২০ টাকায় বিক্রি করতাম, এখন সেটা তিন হাজার ৪৭০ টাকায় বিক্রি করছি। তারপরও অনেকের কাছে এই চাল নেই। এলাকা খুঁজে দু-একটা দোকানে পাবেন।

এবিষয়ে বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বলেন, এ বছর বোরোতে উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। সেজন্য সরকার ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বাজারে ভারতের চাল এখনো আসেনি। এ পর্যন্ত যা এসেছে তা মিল মালিকদের কাছে আছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের কারণে ট্রাকভাড়া বেড়েছে। আগে যেখানে কুষ্টিয়া থেকে ১৭ হাজার টাকায় বড় ট্রাক আসতো, সেটা এখন ২৫ হাজার লাগছে। একটি বড় ট্রাকে ২৫০ বস্তা চাল আসে। বাড়তি ভাড়ার কারণে প্রতি কেজি চালে প্রায় ৫০ পয়সার বেশি খরচ হচ্ছে।

এদিকে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের অভিযোগ, মিল মালিকেরা কারসাজি করে চালের দাম কিছুটা বাড়িয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবহন খরচ। এসব কারণেই মূলত চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী।

অন্যদিকে মিল মালিকদের দাবি, লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজেল দিয়ে চালকল চালু রাখতে হয়। এতে খরচ বাড়ে। ডিজেলের কারণেই সবকিছুর খরচ বেড়েছে। এক জায়গা থেকে চাল অন্য জায়গায় নিতে পরিবহন লাগে। আবার গোডাউন থেকে মিলে ধান নিতেও পরিবহন লাগে। পরিবহন মানেই ডিজেলের ব্যবহার। ৮০ টাকা থেকে এক ধাপে ১১৪ টাকা হয়ে গেছে ডিজেলের লিটার। এ কারণেই চালের দাম বাড়তি।

এবিষয়ে কুষ্টিয়ার মেসার্স দেশ অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির সুপারভাইজর সাব্বির খালেক বলেন, প্রতিদিন কতবার বিদ্যুৎ চলে যায় তার কোনো হিসাব নেই। অর্ডারের মাল সঠিক সময়ে দিতে আমাদের জেনারেটর চালু রাখতে হয়। জেনারেটর চালু মানেই ডিজেলের ব্যবহার। ফলে বিদ্যুতের ইউনিট খরচ পড়ে ৩০ টাকার ওপরে।

তিনি বলেন, ডিজেলের দাম বেড়েছে, ধানের দাম আরও বাড়বে এই ভেবে কৃষক ধান দিচ্ছেন না। বাড়তি দাম পাওয়ার আশায় কৃষক ধান ছাড়ছেন না। এছাড়া ট্রাকের খরচাও বেড়েছে। আমাদের কিছুই করার নেই।

এদিকে সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, গত বছর যেখানে আম্পানে ফসলের ক্ষতি হয়েছে, প্রকিউরমেন্ট হয়নি, জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের মজুদ ছিল মাত্র ৪ লাখ মেট্রিক টন সেখানেও চালের দাম বৃদ্ধি করতে দেওয়া হয়নি। আর বর্তমানে খাদ্য পণ্যের মজুদ ২০ লাখ টন। তারপরও এ বছর চালের দাম বাড়ছে। যারা অবৈধ মজুদ করে চালের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য মিলাররা ধান ৩০ দিন ও চাল ১৫ দিনের বেশি মজুদ করে রাখতে পারবে না। যারা অবৈধভাবে মজুদ করে রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত উৎপাদন আছে, সরবরাহ আছে অথচ চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধানের যদি ঘাটতি থাকতো তাহলে আমদানি করে তা পুষিয়ে নেওয়া হতো। কিন্তু আমদানির লাইসেন্স দেওয়ার পরও তো আমদানি করেননি। ১৭ লাখ মেট্রিক টনের আমদানির অনুমতির জায়গায় মাত্র ৩ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করেছেন। তার মানে পর্যাপ্ত চাল আছে। তাহলে দাম বাড়ছে কেন ব্যবসায় মুনাফা করতেই হয়। তার মানে এই নয় যে, গলা কেটে মুনাফা করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে চালের দাম বাড়াতে হবে এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া হবে না। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মন্ত্রী ডিসি ও ডিসি ফুডদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo