৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ দুপুর ১২:৫২
শিরোনামঃ

ঝালকাঠির ‘বিলাতি গাব’ যাচ্ছে সারাদেশে

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বুধবার, জুলাই ১৯, ২০২৩,
  • 169 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

কোনো ধরনের বপন-রোপণ, যত্ন ও পরিচর্যা ছাড়াই বাগানে জন্ম নেয় ‘বিলাতি গাব’ গাছ। ৫ বছর বয়স হলেই দেওয়া শুরু করে লাল রংয়ের ফল। যা স্থানীয় ভাষায় বিলাতি গাব হিসেবেই পরিচিত। সুস্বাদু এ ফলটি এখন ঝালকাঠির গ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে রফতানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

গ্রামাঞ্চল থেকে মাইকিং করে সংগ্রহ করছেন ফড়িয়ারা। প্রতি কুড়ি (২০টি) বিলাতি গাব আকার ভেদে ৮০-১০০ টাকায় ক্রয় করেন তারা। এরপরে যাত্রীবাহী পরিবহনের করে পৌঁছে দেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট শহরে গাব রফতানি করা হয়।

রাজাপুর উপজেলার মোবারককাঠি গ্রামের একটি মাদরাসা মাঠে মোকাম তৈরি করেন ফড়িয়া খলিল হাওলাদার। তার সঙ্গে আরো ১০-১২ জন এ ব্যবসার সহযোগিতায় জড়িত। তারা সবাই এ মৌসুমে গ্রাম এলাকা থেকে বিলাতি গাব সংগ্রহ করে রফতানি প্রক্রিয়াজাত করণের সহযোগিতা করেন।

ফড়িয়া খলিল হাওলাদার বলেন, মাইকিং করে গাব সংগ্রহ করছি। গাবের আকার ভেদে প্রতি পিস গাব ৪-৫ টাকা করে কিনে নিচ্ছি। পরে আমাদের মোকামে এনে পাশের পুকুরে গাবগুলো পরিষ্কার করা হয়। এরপর ঝুড়িতে প্যাকিং করে দেশের বড় শহরে যাত্রীবাহী পরিবহন বাসে ঐসব শহরের আড়তদারদের কাছে পাঠানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, পাকা গাবের মৌসুম আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস। এ সময় জেলার বিভিন্ন বাজারে পাকা গাবের মৌ মৌ গন্ধে মন মাতোয়ারা হয়ে যায়।

জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের বড় বাজার, চাঁদকাঠি বাজার, কলেজ মোড়, কাঠপট্টি, রাজাপুরের বাগড়ি বাজার, সদরের বাজার, পুটিয়াখালী, লেবুবুনিয়া বাজার, পাকাপুল বাজার, গালুয়া বাজার, নলবুনিয়া বাজার, ফকিরের হাট, চাড়াখালির হাট, বাদুরতলা হাট, কাচারিবাড়ির হাট, বলারজোর হাট, গাজির হাট, পাড়ের হাট, বাইপাস মোড় বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে এবং বাড়ি বাড়ি থেকে ব্যবসায়ীরা গাব পাইকারী হিসেবে কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, মংলা, খুলনা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহর-বন্দরে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করছেন।

বিলাতি গাব গাছের জন্য বীজ বপন, চারা রোপণ বা কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। গাব গাছ থেকে ফল নিচে পড়ে, পাখির খাবারের যোগানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবেই এ গাছের জন্ম হয়। বিলাতি গাব সুস্বাদু এবং কেমিক্যাল মুক্ত হওয়ায় এর চাহিদাও অনেক। বর্তমানে অতিথি আপ্যায়নেও শোভা পাচ্ছে এ ফল।

ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, প্রায় সব বাড়িতেই কম-বেশি গাব গাছ আছে। এ গাছের গোড়ায় কোনো সার বা ওষুধের প্রয়োজন না হলেও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে পরিচর্যা না থাকায় গাব গাছের আধিক্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। বেশি গাব গাছ রোপণ ও পরিচর্যা করলে প্রতি বছর গাব গাছ ও ফল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।

রাজাপুরের গালুয়া বাজারের পাইকারী গাব ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে ১ কুড়ি (২০টি) পাকা গাব ফল আকার অনুযায়ী ৮০-১০০ টাকায় কেনা যায়। পরে সেই ফল বাছাই ও ধুয়ে পরিষ্কার করে ঝুড়িতে প্যাকিং করে বিভিন্ন পরিবহনে করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, মোংলা, খুলনা, যশোর ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহর-বন্দরে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলের মাটি বেশ উর্বর। তাই সব ফলের পাশাপাশি গাব ফলেরও ফলন বেশি। তাছাড়া প্রতি বছরই এ অঞ্চলে গাবের বাম্পার ফলন হচ্ছে। এ গাব স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ হচ্ছে।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদি হাসান সানি জানান, গাব ফরমালিন ও ভেজালমুক্ত একটি দেশীয় ফল। এটি যেমন মজাদার ঠিক তেমনি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo