ইরাকে মোসলেম মোল্লা (৩০) নামে বাংলাদেশি এক যুবককে নির্যাতন করে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার (২৭ আগস্ট) দুপুরে বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ভুক্তভোগী ইরাক প্রবাসী নৈবাবগঞ্জ থানার দড়িকান্দা গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে। ২০১৬ সালে জীবিকার তাগিদে ইরাকে পাড়ি জমান তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সেখানে নির্যাতনের শিকার হন। ২০২১ সালে থানায় মামলা করেন মোসলেম। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
সোমবার (২৮ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআইয়ের সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ মো. কুদরাত-ই-খুদা।
গ্রেফতাররা হলেন, আলী হোসেন (৪৯), শামীম (২৫), শিরিন সুলতানা (৩৫), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১), রবিউল ঘরামী (২৪), শাহিদা বেগম (৫২), সাহনাজ আক্তার লিপি (৩৮) ও আকবর সরদার (৫৫)।
তিনি জানান, অপহরণকারীরা মোসলেমকে নির্যাতন করতেন। ইমোতে ভিডিও কলের মাধ্যমে সেই ভডিও তার মাকে দেখানো হতো। এরপর বিভিন্ন সময় মুক্তিপণের টাকা আদায় করা হতো। সে সময় মুক্তিপণ না দিলে তাকে হত্যা করা হবে বলেও জানানো হতো। এ ঘটনায় মোসলেমের মা চক্রটিকে ১২টি বিকাশে ৩ লাখ টাকা পাঠান।
ইরাক থেকে যেভাব অপহরণ করা হলো মোসলেমকে
কাজের তাগিদে ইরাকে পাড়ি জমিয়েছিলেন মোসলেম। এক সময় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সেলিম মিয়া নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বিরের হাতে তুলে দেন মোসলেমকে। আটকে রাখা হয় আবদ্ধ রুমে। একপর্যায়ে তার সাথে থাকা ২ হাজার ইউএস ডলার কেড়ে নেওয়া হয়। এছাড়া বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দেড়লাখ টাকার একটি আইফোন নিয়ে নেওয়া হয়।
মো. কুদরাত-ই-খুদা জানান, তিন দিন ধরে নির্যাতন করে সেই ভিডিও তার মাকে দেখানো হয়। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় ১১ লাখ টাকা। ছেলেকে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে ১২টি বিকাশ নম্বর ২৬ কিস্তিতে ৬ লাখ টাকা পাঠান ভুক্তভোগীর মা।
তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আসামি ইরাকে অবস্থান করছেন। তারা হলেন, আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বির। তারা ইরাকে অবস্থান করলেও মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করতো তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া অজ্ঞাতও রয়েছেন কয়েকজন। শাহনেওয়াজ অপহরণকারীদের দলনেতা ছিলেন বলে গ্রেফতাররা জানিয়েছেন। এছাড়া গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা।