বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে রাজধানীর একমাত্র লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যাত্রী কম থাকায় লঞ্চ ছেড়েছে কম।
সদরঘাট ও এর আশেপাশের এলাকা স্বাভাবিক রয়েছে। রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৭ টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে সদরঘাটে দেখা যায়, টার্মিনালে পন্টুনে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা আছে লঞ্চ। তবে যাত্রীদের শোরগোল নেই। সকাল থেকে বিভিন্ন রুটে নিদিষ্ট সময়ে লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। তবে লঞ্চগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কম।
সকাল ৮টা পর্যন্ত চাঁদপুর, নড়িয়া, মৃধারহাট, ইলিশার উদ্দেশে ছয়টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। যাত্রী কম থাকায় কিছু লঞ্চ যাবে না। আবার কিছু লঞ্চে যাত্রী উঠলেও সংখ্যায় কম থাকায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রী কম, আপ-ডাউনে লঞ্চের খরচ উঠবে না। তাই সকালে না গিয়ে বিকেলে যাবে।
ঢাকা-কালিগঞ্জ-ইলিশা রুটে ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় ছেড়েছে দোয়েল পাখি-১০। লঞ্চটির ইনচার্জ মো. জিয়া বাংলানিউজকে বলেন, নৌপথে কোনো হরতাল থাকে না। কিন্তু হরতাল দেখে যাত্রী কমে যায়। আর যাত্রী কমে গেলে লঞ্চ মালিকদের লোকসান হয়।
চাঁদপুরগামী বোগদাদিয়া-৭ এর ইনচার্জ রবিন চন্দ্র দে বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের হরতালের জন্য যাত্রী কম। সকালে চাঁদপুর লাইনে তিন থেকে চারটি লঞ্চ চলাচল করে। কিন্তু আজ শুধু একটি যাচ্ছে। একবার আপডাউন করলে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। সে টাকাটা না উঠলে তো লঞ্চ চালিয়ে লাভ হবে না। সেজন্য লঞ্চের সংখ্যা আজকে কম।
লঞ্চ থেকে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে এম ভি টিপু। লঞ্চের কেরানি মো. হাছান বাংলানিউজকে বলেন, ইঞ্জিনের সমস্যা, তাই যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু লঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার সময় একজন যাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের হরতালের জন্য যাত্রী কম। লঞ্চ ছাড়লে লোকসান হবে। তাই যাত্রী নামিয়ে অন্য লঞ্চে উঠিয়ে দিচ্ছে।
পেশায় সিএনজিচালক ভোলার বোরহানউদ্দিন থানার যাত্রী মো. শামীম বলেন, হরতাল দেখেই গ্রামে চলে যাচ্ছি। এই হরতাল কতদিন থাকে বলা যায় না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার চলে আসব। হরতালের মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কখন আগুন দিয়ে দেয়, বলা যায় না। গতকাল কয়েকটি বাস পুড়িয়েছে, সিএনজি ভেঙেছে। তাই নিরাপদ থাকতে বাড়ি যাচ্ছি। এখানে বসে থাকলে খাওয়ার খরচ লাগবে। সেটা কোথা থেকে পাব?
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল হলে সাধারণভাবে যাত্রী কম থাকে। তবে আমাদের লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক আছে। সদরঘাট এলাকায় হরতালের কোনোকিছু দেখা যায়নি। টার্মিনাল এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বিআইডব্লিউটিএর কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, রাত ১২ থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ছয়টি লঞ্চ দেশের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে চাঁদপুরে তিনটি, ইলিশায় একটি, নড়িয়ায় একটি, মৃধার হাটে একটি। হাতিয়া, মুলাদি, চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঘোষের হাট, লালমোহন, বোরহান উদ্দিন, কালাইয়া, ভাসানচর, বেতুয়া, পাতার হাট, ইলিশা থেকে ৮টা পর্যন্ত ঢাকাতে লঞ্চ এসেছে ২৪টি। অন্যান্য দিন এ সময় আরও বেশি লঞ্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। যাত্রী কম দেখে লঞ্চ কম যাচ্ছে।