৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ৮:১৭
শিরোনামঃ

লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম, নাভিশ্বাস কম আয়ের মানুষের

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বুধবার, আগস্ট ২৪, ২০২২,
  • 181 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

মহামারি করোনার ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে নিম্নবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তদের জীবন চরম সংকটে পড়ে। সেই ধাক্কা কিছুটা সামাল দিয়ে উঠতে না উঠতেই গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় মানুষের জীবনে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে।

নজরদারি বাড়িয়েও নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। জরুরি নিত্যপণ্য চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা-ময়দা, দুধসহ সব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।

লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে জীবন চালাতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের।

কম দামে চাল নিতে এসে ওএমএস ট্রাকের অপেক্ষায় দুই ঘণ্টা আগেই শেওড়াপাড়ায় ঢাকা টেকনিক্যালের মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছেন সালেহা বেগম।

ট্রাক থেকে পণ্য নেবেন নেই আশায়। ট্রাক আসার ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পণ্য নিতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে মেট্রো রেলের পিলারের নিচে গিয়ে অবস্থান নেন।

এসময় বাংলানিউজকে তিনি বলেন, স্বামী মারা গেছে ,চার সন্তান নিয়ে বসবাস করি। বড় ছেলে কাজ করে। তার আয় দিয়েই আমাদের চলতে হয়। চাল-আটার যে দাম, এতে করে সংসার চলে না। তাই এখানে সকালে এসে অপেক্ষায় থাকি কখন ট্রাক আসবে পণ্য কিনব। অনেক দিন অপেক্ষায় থেকে ট্রাক না আসায় ফিরে যেতে হয়। পরিবার নিয়ে দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতেই আমাদের এই অপেক্ষা।

নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বামীর একার আয়ে সংসার চলছে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিচ্ছি বলে জানান গৃহিণী শামসুন্নাহার। বলেন, তবে দীর্ঘ ও অতিরিক্ত গরমে লাইনে অসুস্থবোধ করছি। জানি না আদৌও পণ্য নিতে পারব কিনা।

এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, মাছ, গরু বা খাসির মাংসের বদলে নিম্নবিত্ত পরিবারের কাছে বেশি চাহিদা ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মাংসের। কয়েক দিন আগে সেগুলোরও অস্বাভিক দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েন তারা। তবে, এখন অনেকটাই কমে আসায় তারা ডিম ও ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারছেন। বুধবার ফার্মের মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা। আর ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ১৪০ টাকা। শুধু তাই নয় তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছের দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।

চাল, ডাল, তেল, মরিচের দামও এখন আকাশচুম্বী। ফলে নিত্যদিনের বাজার খরচ মেটাতে দিশাহারা নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না কিছুতেই। জীবন চালাতে ধার-কর্য করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে করে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

কাজীপাড়া বাজারে এসেছেন  গাড়িচালক রাব্বী মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আয় বাড়েনি অথচ খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। পরিবারের মুখে দু’মুঠো ডাল-ভাত দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আয়ের সঙ্গে ব্যয় মিলাতে পারছি না। চরম সংকটের মধ্যে দিন কাটছে।

অন্যদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে চাল, ডাল, আটা ভোজ্য তেল, দুধ প্রায় সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে।

মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, সরু চাল ৬৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা এক মাস আগে প্রকারভেদে ৮ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।

খোলা ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের আটা ও ময়দার দামও বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে খোলা আটা ২১.১৮ শতাংশ বেড়ে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত আটার দাম এক মাসে বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা, আর খোলা ময়দা ৮ টাকা পর্যন্ত। এক ডজন ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল খোলা ১৬৬-১৮২ টাকা, বোতলজাত ১৮৫ থেকে ১৯৫ টাকা লিটার, দেশি মসুর ডালের কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, চিনি ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে

তবে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সব ধরনের পণ্যের উপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে পণ্যের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রায় সব মানুষেরই নাভিশ্বাস উঠেছে জীবন চালাতে। সংসার চালাতে না পেরে অনেকেই ঢাকা ছেড়েছেন। তাই নিত্যপণ্যের লাগাম টেনে না ধরতে পারলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবন চরম সংকটে পড়বে বলে মনে করেন তারা।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo