৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ১০:৪০
শিরোনামঃ

সন্তান ধার নিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে শিক্ষিকা!

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ সোমবার, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২,
  • 1072 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

 

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ধার করা সন্তানকে নিজের সন্তান হিসেবে চালিয়ে দিয়ে অফিসের বড় বাবুর সহযোগিতায় মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করার অভিযোগ উঠেছে আলেয়া সালমা নামের এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এ শিক্ষিকা নাগেশ্বরীর হাসনাবাদ ইউনিয়নে মুনিয়ারহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আলেয়া সালমা জানান “কি হয়েছে না হয়েছে সবাই জানেন, আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক, এ.টিও, সবাইকে ম্যানেজ করে আমি ছুটিতে আছি। শিক্ষা অফিসের বড়বাবু এসব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

তিনি মোবইল ফোনে আরো বলেন, আপনারা নিউজ করে আমার কিছুই করতে পারবেন না। যতদিন আমার ট্রান্সফার হবে না, ততদিন আমি ছুটি নিয়েই চলব। আমাদের সিস্টেম আছে। চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা সরকারেরও নেই।”

অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্ত আলেয়া সালমা চলতি বছরের ১৪ মার্চ থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করছেন। গর্ভধারণ না করেও এ ছুটি নিতে তিনি ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন। প্রতিবেশীর সন্তানকে নিজের সন্তান দেখিয়ে এ ছুটি আদায় করেন। কয়েক মাস যেতে না যেতেই তা জনসম্মুখে উঠে আসে।

অভিযোগ রয়েছে ছুটি নেয়ার পুরো বিষয়টি প্রধান শিক্ষক খাদিজা সুলতানা, উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী ও হিসাবরক্ষক (বড়বাবু) আজিজার রহমান, সহকারী শিক্ষাকর্মকর্তার আবু নোমান মো. নওশাদ আলীর যোগসাজসে এ ধরণের অনৈতীক ছুটিতে আছেন ওই শিক্ষিকা।

জানা যায়, আলেয়া সালমা বদলি সূত্রে ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী মুনিয়ারহাট বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ২০১৯ সালে বিয়ে করেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলা কাগইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক শফি আহমেদ স্বপনকে। বিয়ের পর থেকে বগুড়ায় চলে যান আলেয়া সালমা।

এরপর করোনার কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও তিনি স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। এসময় তিনি চিকিৎসাসহ নানা অজুহাতে ছুটি নিয়েছেন।

সর্বশেষ মা না হয়েও মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করেন আলেয়া সালমা। চলতি বছরের ১৪ মার্চ সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন দেখিয়ে ১৩ মার্চ থেকে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করেন আলেয়া সালমা। কিন্তু গর্ভকালীন সালমার শারীরিক কোনো পরিবর্তন বিদ্যালয়ের সহকর্মীদের নজরে পড়েনি।

এ কারণে তিনি ১৩ মার্চ কোলে শিশু সন্তান নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে হাজির হন। জমা দেন ছুটির আবেদন। এ সময় তার সাথে ছিলেন শারমীন নামের এক নারী। কিন্তু আলেয়ার কোলের শিশুটি তার নিজের সন্তান নয়।

মুনিয়ারহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তান পড়েন এমন কয়েকজন অভিভাবক জানান, মাঝে মধ্যে আলেয়া আপা স্কুলে আসতেন। আমাদের সাথে দেখা হতো তাকে দেখে সন্তান সম্ভাবা মনে হয়নি।

অভিভাবক ফরিদুল ইসলাম, আব্দুল মমিন, ফরিদা বেগম জানান, অলেয়া ছালমা আপা ভুয়া সন্তান দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন। আর এসব কিছু করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ও অফিসাররা।

বিদ্যালয়টির অন্য শিক্ষকেরা জানান, নাগেশ্বরী থাকা অবস্থায় তিনি আসতেন। তবে বগুড়া যাওয়ার পর তাকে আসতে দেখতাম না। সন্তান হওয়ার বিষয়টি তারা শুধু শুনেছেন, দেখেননি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আলেয়া ছালমার ঘরে প্রথম স্বামীর ২ সন্তান, দ্বিতীয় স্বামীর ১ সন্তান রয়েছে। তৃতীয় (বর্তমান) স্বামীর ঘরে কোন সন্তান না থাকলেও তিনি নিজেকে ৪ সন্তানের জননী হিসেবে দাবী করেন। তবে শিক্ষা অফিসে শুধুমাত্র প্রথম স্বামীর দুই সন্তানের নাম অন্তর্ভূক্ত করা আছে। শেষ যে শিশুটিকে নিজের সন্তান দেখিয়ে আলেয়া সালমা ছুটি ভোগ করছেন। সে সন্তান তার নয়। সে শিশুটি ছালমার বর্তমান স্বামীর বাড়ির পাশের দম্পতি আনিছুর রহমান পাশা ও শারমীনের দ্বিতীয় সন্তান।

এ বিষয়ে শারমিন জানান, ‘সালমা আমার আত্মীয়ের মতো। আমি সন্তান সহ তার সাথে কুড়িগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার বাচ্চা তার হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে সেটা আমি কিভাবে বুঝবো।

তিনি আরোও জানান, তার বড় মেয়ের নাম আফিফা। বয়স পাঁচ বছর। আর ছোট মেয়ের নাম আশফিয়া। মার্চ মাসে আশফিয়ার জন্ম হয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা সুলতানা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষক আলেয়া ছালমা নিয়মমাফিক ছুটিতে আছেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী ও হিসাবরক্ষক (বড়বাবু) আজিজার রহমান তার বিরুদ্ধে উঠা সহযোগীতার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, আলেয়া সালমা তার প্রতিবেশী বোন হয়।

সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু নোমান মো. নওশাদ আলী বলেন, বিধি অনুযায়ী শিক্ষিকার মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি অন্যের বাচ্চাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয় তাহলে কিছু করার নেই। কেননা আমরা তো আর ডিএনএ পরীক্ষা করি না, করার উপায়ও নেই।

নাগেশ্বরী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকতার্ মোবাশ্বের আলী বলেন, আলেয়া ছালমার সন্তানের বিষয়টি যদি মিথ্যা হয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...

© All rights reserved © 2021
Developed By Engineerbd.net
EngineerBD-Jowfhowo